কোন এক বিশেষ থানায় সাহায্যের নাম করে বহুদিন ধরে চলছে দুর্নীতি। অন্য কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে থানার বড়বাবু নিজেই ছদ্মবেশে হাজির হলেন থানায়। দোষিদের উচিত শাস্তি যেমন দিলেন। তেমনই যারা ভালো কাজ করছেন তাদের হাতে তুলে দিলেন বকশিশ। ঠিক যেন গায়ে কাঁটা দেওয়া কোন বলিউড সিনেমা তাইনা। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হতে পারে কিনা ভেবে দেখেছেন কখনও। কৃষ্ণা প্রকাশ, পুনের পিম্পরি চিঞ্চওয়াডরা কমিশনারেট এর পুলিশ কমিশনার। হঠাং সিদ্ধান্ত নেন ছদ্মবেশে যাবেন তিনটে বিশেষ পুলিশ স্টেশনে। সেখানে কর্মরত অফিসারদের সততা আর তৎপরতা যাচাই করে দেখবেন নিজের চোখে। এই কাজে তিনি সঙ্গে নেন অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার প্রেরণা কাট্টেকে। কুর্তা এবং জিন্স গায়ে দেন কৃষ্ণ প্রকাশ
( Krishna Prakash), লাগিয়ে নেন নকল দাড়ি এবং পরচুলা। প্রেরণা সাজেন তার স্ত্রী। আর দুজনেই মাস্ক পরে নেন মুখে, ফলে তাদের চিনতে পারা যে কারোর কাছে প্রায়ই অসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথমে তারা হাজির হন হিঞ্জ্যেওয়াড়ি পুলিশস্টেশনে। এখানে যাওয়ার পথে কিছু স্থানীয় ছেলেকে বাজি পোড়াতে দেখেছিলেন তারা। ছেলেগুলোর কাজের ফলে এলাকার লোকেরা বিরক্ত হয়েছিলেন যথেষ্ট। এই বিষয়টাকে তারা কাজে লাগান। থানায় পৌঁছে কৃষ্ণ প্রকাশ নিজের পরিচয় দেন জামাল কামাল খান নামে। তিনি বলেন বিকেলের নামাজের পর যখন তারা ফিরছিলেন ব্যবধান এলাকার কাছাকাছি কয়েকজন গুন্ডাকে বাজি পড়াতে দেখেন তারা। গুন্ডা গুলি তার স্ত্রীর সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করে তিনি বাধা দিতে গেলে তার উপরেও তারা চড়াও হয়। সাথে সাথে এগুলো করার জন্য থানা থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় টিম। কৃষ্ণ প্রকাশ এতে ভিষন প্রসন্ন হন এবং অবশেষে নিজের পরিচয় জানান তাদের। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে তারা দুজনে একই ছদ্মবেশ ধারণ করে চলে যান ওয়াকার পুলিশ স্টেশনে। সেখানে গিয়ে কৃষ্ণা বলেন যে কয়েকজন বাইক আরোহী তার স্ত্রী এর গলা থেকে চেন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। বলা মাত্র ওয়াকার থানার পুলিশ অফিসাররা খোঁজ খবরের জন্য একটি টিম পাঠিয়ে দেন ঘটনাস্থলে।
আরও পড়ুন:কেন বর-বউ দুজনের গলায় ঝোলালেন মঙ্গলসূত্র, বিয়ের পর মঙ্গলসূত্র কেবলমাত্র স্ত্রী একাই কেন পরবেন !
এছাড়া একজন সাব ইন্সপেক্টর হাতে ঘটনাটির ঠিকঠাক ইনভেস্টিগেশন এর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় কৃষ্ণা এবং প্রেরণাকে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দেবার প্রস্তাব দেন তারা। তাদের তৎপরতা অভিভূত হয়ে কৃষ্ণ প্রকাশ নিজের আসল পরিচয় দেন এবং ভুসি প্রশংসায় ভরিয়ে দেয় তাদের। তবে সব জায়গায় যে এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি তা কিন্তু নয়। তৃতীয় দিন প্রেরণাকে সাথে নিয়ে কৃষ্ণ প্রকাশ পৌঁছে যান পিম্প্রি পুলিশ স্টেশনে। সেখানে গিয়েই ব্যস্ততা দেখিয়ে কৃষ্ণা বলেন তার পরিচিত কোন এক পরিবারের কোভিড আক্রান্ত পেশেন্টকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য 8000 টাকা চেয়ে বসে আছে, এক এম্বুলেন্স সার্ভিস। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় একেবারেই উল্টো থানায় কর্মরত পুলিশ অফিসাররা রিপোর্ট লিখেনিনা তারা সাফ জানিয়ে দেন এ বিষয়ে কিছুই করাবার নেই তাদের। এমন কি প্রেরণার কথাতেও কান দেননা তারা। এই সময়ের আর অপেক্ষা না করে নিজের আসল পরিচয় দেন পুলিশ কমিশনারেট কৃষ্ণ প্রকাশ এবং সরাসরি শোকজ নোটিশ ধরিয়ে দেন পিম্প্রি থানার অফিসারদের। প্রয়োজনে তাদের সাসপেন্ড করবেন।
এমনটাও জানিয়ে দেন তিনি। এই খবরটি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন কৃষ্ণ প্রকাশ এবং প্রেরণা কাট্টে। তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আপনাদের কুর্নিশ জানাই আমরা। আপনাদের মতন সৎ এবং নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসাররা থাকলেই এই সমাজ খুব শিগগিরই বদলে যাবে।
Cradit-UltiMad Media YouTube Sujoyneel
আরও পড়ুন: 257 টাকা নিয়ে ঢাকায় আসা ছেলেটা আজ বাংলাদেশের সুপারস্টার !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন